মাদ্রাসা থেকে পালাতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার বিকেলে কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার এলাকার মারকাযুস সুন্নাহ মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শিক্ষার্থীর নাম মো. ফয়সাল। ১২ বছর বয়সী শিশুটি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মহালক্ষ্মীপাড়া গ্রামের মৃত আবুল ফজল মাস্টারের ছোট ছেলে।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
স্বজনরা জানান, গত ৭ জুন মাদ্রাসায় ভর্তি হয় ফয়সাল। সে হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল।
মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষার্থী নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানায়, ফয়সাল কয়েক দিন ধরে বাড়িতে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করছিল। তবে মাদ্রাসা থেকে তাকে যেতে দেয়া হয়নি। মাদ্রাসা থেকে বলা হয়েছে কোরবানির ঈদের পরে ছুটি দেয়া হবে।
রোববার বিকেলে প্রতিদিনের মতো অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফয়সাল মাদ্রাসার ছাদে ওঠে। মাগরিবের নামাজের আগে সকল শিক্ষার্থী ভবনে চলে আসে। তবে ছাদে থেকে যায় ফয়সাল।
সবাই যখন মাদ্রাসা ভবনে চলে আসে, তখন ফয়সাল দৌড়ে গিয়ে ছাদ থেকে লাফ দিলে ভবনের পাশে থাকা দোকানের টিনের ছাদ ভেঙে মাটিতে পড়ে যায়।
তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফয়সালকে মৃত ঘোষণা করেন।
মারকাযুস সুন্নাহ মাদ্রাসাটি পাঁচতলাবিশিষ্ট। মাদ্রাসা ভবনের ছাদ খেলাধুলার জন্য ব্যবহার করা হয়। রেলিং ছাড়া ছাদটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
স্থানীয়রা জানান, বাঙ্গরা বাজার থানা এলাকায় ওই মাদ্রাসাসহ আরও কয়েকটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিচে নামতে দেয়া হয় না। শিশুদের ভবনের ছাদেই খেলাধুলা করতে বাধ্য করা হয়।
ফয়সালের মা পেয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার তিনডা পোলা। আমার জামাই এক বছর আগে মারা গেছে। মাত্র ১২ দিন আগে আমার পোলাডারে আত্মীয়স্বজনদের কথায় মাদ্রাসাডায় ভর্তি করাইছি।
‘কয়দিন আগে আমার পুত কইছিল, আম্মা, তোমার জন্য পরান পোড়ে। আমি কইছি, বাবারে মনোযোগ দিয়া পইড়ো। আল্লারে ডাইক্কো। এহন জানি না কেরে আমার পোলা লাফ দিয়া পইড়া মইরা গেল? আমি আল্লার কাছে বিচার দিলাম। মাত্র ১২ দিন আগে আমি আমার পোলারে মাদ্রাসাডায় ভর্তি করছি। আমার পোলা ১৩ পারা কোরান মুখস্থ করছিল।’
সোমবার বিকেলে ওই মাদ্রাসার পরিচালক হাফেজ মো. আরিফ হাসানের ফোনে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন ও খুদেবার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর পাওয়া যায় নাই।
বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘আমরা এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। যদি অভিযোগ পাই, অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’